Dhamal (দামাল) Bangla Movie Download Review /দামাল ফুল মুভি ডাউনলোড
'দামাল' -এ মিমের অভিনয় দেখে মনে হয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রে একজন পরিপূর্ণ অভিনেত্রী পেলাম। ওনার তুলনা ওনি নিজেই। নিজেকে নিজেই ভাঙছেন, গড়ছেন এবং অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন! 👌
'পরাণ' সিনেমায় মিম টপ ফ্লাইট অভিনয় করেছিলেন। অনন্যা চরিত্রে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে মিম দর্শকের প্রশংসায় ভেসে যান। দর্শকের মাঝে মিমের সেই অভিনয়ের মোহ কেটে যাওয়ার আগেই আবারও চমক দেখালেন সদ্য মুক্তি পাওয়া 'দামাল' সিনেমায়। এবার তিনি বীর বাঙালীর বীর বধুর চরিত্রে হাজির হন। হাসনা চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ে দর্শকের হাততালি পেয়েছেন। মিম এর অভিনয় আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক পরিণত। বর্তমান খুব ভাল করছেন মিম। 'দামাল' সিনেমায় মিমকে দুটো অসাধারণ চরিত্রে দেখতে পেলাম। প্রথমে রাজ এর বউ হিসেবে কি সুন্দর মানিয়ে নিলেন মিম। একজন লাজুক তরুণী হতে একজন সাধারণ বাঙালী বধু যেমন হয়। পরবর্তীতে যুদ্ধকালীন সময়ে একজন দেশ প্রেমিক হিসেবে যুদ্ধ করেছেন। তুলে নিয়েছেন অস্ত্র। সবমিলিয়ে মিম জাস্ট এমাজিং।
বিদ্যা সিনহা মিম এমনিতেই দারুণ অভিনয় করেন। তবে রায়হান রাফীর দামাল সিনেমায় একটু ভিন্মভাবেই করলেন। ধীরে ধীরে সাধারণ হাসনা হয়ে উঠেছেন সাহসী হসনা। সদ্য বিয়ে করার পর বরকে নিজেই পাঠালেন দেশের জন্য যুদ্ধ করতে। নিজেও শ্বশুরের সাথে নেমে পড়েন আরেক যুদ্ধে। ডাক্তার শ্বশুরের সাথে যুদ্ধে আহতদের সেবা দেয়ার পাশাপাশি পাকিস্তানি মিলিটারিদেরও কৌশলে খু'ন করেন। একজন বীর বাঙালীর নারীর মতোই ছিলেন মিম। চলচ্চিত্রের তারকাদের নিয়ে দর্শকের মাঝে উন্মাদনা থাকাটা খুব স্বাভাবিক। তবে আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘদিন কোনো নায়িকাকে নিয়ে এমন উল্লাস দেখা যায়নি। মিমকে ঘিরে সিনেমাপ্রেমীদের এমম উল্লাস বলে দিচ্ছে দর্শকের কাছে মিম সেরা।
হাসনা চরিত্রে মিমের বধুবেশে লুক বিউটিফুল। রাজের সাথে তার খুনসুটি ভালবাসা খুবই সুন্দর ছিল। মিমকে বেশ চার্মিং লেগেছে। এছাড়া সিনেমার শেষ মিম পুরাই কাঁপিয়ে দিলেন। শেষের দৃশ্যে মিমের অতুলনীয় অভিনয়ে হলজুড়ে দর্শক করতালি দিয়ে পুরো হল মুখর করে রাখে। পরাণ এর অনন্যা যেখানে গালি খেয়েছেন সেখানে হাসনা পেয়েছেন হাততালি ও প্রশংসা। রাজের সাথেও তার কেমিস্ট্রি চোখো লাগার মতোই। এছাড়া মিমের কস্টিউম বেশ নিখুঁত মনে হলো। সংলাপেও পরিমিত ছিলেন। চোখেমুখে নিখুঁত এক্সপ্রেশনে মিমকে আরও অনন্য করে তোলে।
মিম আপনি অসাধারণ। আপনি সেরা।
‘’পরাণ’’ নির্মাতা রায়হান রাফী’র ছবি ‘’দামাল’’।
সিনেমায় রাজের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে আছেন পরাণের অনন্যা ‘’বিদ্যা সিনহা সাহা মিম’’।
সম্পূর্ণ সিনেমায় তার চরিত্র এবং লুকের ভিন্নতা চোখে পড়েছে। চরিত্র আর লুক নিয়ে এতোটা এক্সপেরিমেন্ট বাংলা সিনেমার অভিনেত্রীদের মধ্যে কমই দেখেছি।
"হাসনা" চরিত্রে মীম নিজেকে অকপটে মানিয়ে নেবেন,"পরাণ" দেখেই সেটা অনুমান করেছিলাম এবং সেটাই ঘটল। চ্যালেঞ্জিং সিকোয়েন্সকেও হাসনা পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে গেছেন। মিষ্টি হাসনা প্রতিশোধের আগুনে পুড়ে রুদ্রমূর্তি হাসনা'র রূপ ধারণ করেছেন। স্বামী মুন্নার বারুদ যেন ঝালিয়ে দিয়েছে স্ত্রী হাসনাকেও।
বিদ্যা সিনহা সাহা মিম ক্লাইম্যাক্সের একটা দৃশ্যেই গোটা সিনেমায় নিজের করে নিয়েছেন। সিনেমায় শেষে তাই মীম হয়ে উঠেছেন ছবির মূখ্য নায়িকা। ’দামাল’ সিনেমায় তিনি যে এতোটা সুন্দর মানিয়ে নেবেন তা আমি ছবি মুক্তির আগে এতো বেশি ধারণা করতে পারিনি।
এ ছবিতে প্রধান চরিত্রে মিমের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছি আমি সহ সবাই।
'পরাণ' এবং 'দামাল' কল্যাণে মিম এখন সময়ের সেরা অভিনেত্রী এটি বলাই যায়।মিম সময়ের সেরা অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন এবং ২০২২ সালটা নিজের করে নিবেন বলেই মনে হচ্ছে।
আগামী দিনগুলোর জন্য মিমের জন্য রইলো শুভ কামনা।
'দামাল' (স্পয়লার নেই)
শুরুতে যদি বলি তাহলে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় একদল ফুটবল পাগলদের নিয়ে সাজানো হয়েছিলো একটি ফুটবল দল যার নাম দেয়া হয়েছিলো 'স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল'। যারা যুদ্ধ করেছে খেলার মাঠে। ফুটবল ছিলো যাদের যুদ্ধ করার অস্ত্র। আর এই ফুটবল দলের পেছনের গল্পটিকে নিয়ে রায়হান রাফি নির্মাণ করেছে 'দামাল'।
গল্পটিতে পরিচালক পুরো ফুটবলকে বানিয়েছেন আবেগের একটি নাম। যেখানে ফুটবলই ছিলো পাগলামি, দুরন্ত ছুটে চলা, আবার ছিলো ভালোবাসাও! একটা সময় ফুটবল মাঠেই ভেসে উঠবে একটি যুদ্ধচিত্র। স্বজন হারানো বেদনা নিয়েও যারা বুকে সাহস নিয়ে লড়াই করে গেছেন সেই মানুষ গুলোকে দেখা যাচ্ছিলো হার না মানা এক যুদ্ধের ময়দানে। যেখানে জয়ের বিকল্প নেই। কারণ এই খেলা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের। কেনা হবে অস্ত্র যা দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়াবে 'দামাল' যোদ্ধারা।
সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ এবং সিয়াম আহমেদ। দুজনের ক্যারিয়ারে এটি নিঃসন্দেহে একটি সেরা কাজ হয়ে থাকবে। ইন্তেখাব দিনারের দুটি লুকের দেখা পাওয়া যাবে সিনেমায়। একটি তার বয়সকালের অন্যটি কোচ থাকাকালীন সময়ের। মজার বিষয় হচ্ছে দুটি সময়েই তিনি জুগিয়েছেন প্রেরণা। সিনেমার ট্রেলারেই জানান দেয়া হয়েছিলো রাশেদ মামুন অপু থাকছেন নেগেটিভ চরিত্রে অর্থাৎ পাকবাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে। পুরো সিনেমায় তিনি তার বাংলা উর্দুর মিশেলে পুরোপুরি ভাবে মিশে ছিলেন তার কটু মিয়া চরিত্রটিতে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, কটু মিয়ার মতো ১৯৭১ সালে এমন অনেক মানুষ ছিলেন যারা মুক্তিযোদ্ধাদের পাকবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। প্রয়াত অভিনেতা কায়েস চৌধুরী ছিলেন রাজ অর্থাৎ মুন্নার বাবার চরিত্রে। পেশায় ডাক্তার এই লোকটি চিকিৎসা দিয়ে গেছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের। তবে একজনের চরিত্রের কথা বলতেই হবে যার নাম হাসনা। হাসনা চরিত্রটির মধ্যে মিম প্রাণ দিতে পারবেন কতটা, এটা নিয়ে আমার বেশ শংকাই ছিলো। তবে সেই শংকা উড়ে গেছে মিমের পারফরম্যান্স দেখে। যেন বাঘিনীর রূপ ধারণ করেছিলেন তিনি। সুমিও তার জায়গায় ভালো করেছেন তবে মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স করেছেন সুমিত সেনগুপ্ত। তবে সৈয়দ বাবু আরেকটু ভালো করতে পারতেন। পাকবাহিনীর মেজর চরিত্রে তাকে মানিয়েছে ভালো এবং উর্দু ভাষার সাথে তার ভয়েসটাও দারুণ লেগেছে কিন্তু উর্দু বলার ধরনে সামান্য দুর্বলতা দেখা গেছে যেটা আরও ভালো হতে পারতো। এছাড়া বাকি যারা ছিলেন সকলেই তাদের জায়গায় ভালো করেছেন।
সিনেমায় কালার গ্রেডিং এবং সেট ডিজাইন ছিলো দুর্দান্ত। তবে ভিএফএক্স এর ব্যবহার আরও ভালো করা যেতো। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে কখন কার বিপরীতে এবং কোন স্থানে খেলা গড়িয়েছে সেটিও স্ক্রিনে উল্লেখ করা হয়েছে যেটা ভালো লেগেছে। সিনেমার গান গুলো আগেই ভালো লেগেছিলো তবে বড় স্ক্রিনে গুজবাম্প দিয়েছে টাইটেল ট্র্যাকটি। সিনেমাতে একটা উল্লেখযোগ্য দিক ছিলো নারীদের ফুটবলকে তুলে আনা। নারীদের ফুটবল খেলা নিয়ে আমাদের সমাজে বিশেষ করে গ্রামে এখনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। 'মেয়েরা হাফ প্যান্ট পড়ে ফুটবল কেন খেলবে'? এই কথাটার জবাব নারীরা যে নিজেদের খেলার মধ্যেদিয়েই দিয়েছেন এবং দেখিয়ে দিয়েছেন যে, 'আমরা নারী কিন্তু আমরাও পারি'! ভালো লেগেছে মেয়েদের ফুটবলের সাফল্য সিনেমায় তুলে ধরাটা।
'দামাল' রায়হান রাফির এখন পর্যন্ত সেরা নির্মাণ আমার কাছে মনে হয়। সময় করে দেখে নিতে পারেন সিনেমাটি।